নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাওরিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগের কথা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে মাওরিদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে পার্লামেন্টে আনা একটি বিল। এ বিল মাওরিদের অধিকার খর্ব করবে—এমন আশঙ্কা থেকে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছেন দেশটির মাওরি সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার প্রায় ৪২ হাজার মানুষ ওই বিলের প্রতিবাদে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। ফলে ওই এলাকার ব্যস্ত সড়কগুলোয় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
১৮৪০ সালে উপনিবেশ স্থাপনের সময় ব্রিটিশ রাজ ও নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাওরি প্রধানদের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়, যেটি ‘ওয়েটাঙ্গির চুক্তি’ নামে পরিচিত। দুপক্ষের সমন্বয়ে কীভাবে দেশের শাসনকার্য পরিচালিত হবে, তার বর্ণনা ছিল সে চুক্তিতে। এতদিন এ চুক্তি অনুযায়ীই আইন ও নীতি-নির্দেশনা তৈরি করে এসেছে দেশটি। গত ৭ নভেম্বর নিউজিল্যান্ডের মধ্য-ডানপন্থি সরকার ১৮৪ বছরের এই চুক্তিতে পরিবর্তন আনবে এমন একটি বিল উত্থাপন করে পার্লামেন্টে। ক্ষমতাসীন জোট সরকারের অংশীদার এসিটি নিউজিল্যান্ড পার্টি ওয়েটাঙ্গি চুক্তির পরিসর ছোট করার চেষ্টা করছে। তাদের মতে, আদিবাসী নয়—এমন নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য করে এই চুক্তি। তবে বিলটি এখনো পাস হওয়ার মতো সমর্থন পায়নি পার্লামেন্টে। পার্লামেন্টে মাওরি সম্প্রদায়ের এক নারী এমপি প্রতিবাদে বিলের একটি কপি ছিঁড়ে ফেলে সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দেন।
সমালোচকরা বলছেন, মাওরিদের ক্ষমতায়নে কয়েক দশক ধরে চলে আসা আইন ও নীতিমালা পরিবর্তন করার লক্ষ্যে এই বিল উত্থাপিত হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের ২০ শতাংশ জনসংখ্যা মাওরি আদিবাসী। তবে বাকি জনসংখ্যার তুলনায় মাওরিরা বেশি বঞ্চিত। মঙ্গলবারের বিক্ষোভে অনেককেই ঐতিহ্যবাহী মাওরি পোশাকে দেখা গেছে। আবার অনেকেই মাওরি ভাষায় ‘চুক্তিকে সম্মান করে’ লিখিত টি-শার্ট পরতে দেখা যায়। বিক্ষোভে শত শত মাওরি পতাকা দেখা যায়। গত ১১ নভেম্বর বিলের বিরোধিতাকারীরা দেশের এক প্রান্ত থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। বিভিন্ন শহর ও বন্দর থেকে হাজার হাজার মানুষ এই পদযাত্রায় যোগ দেন। মঙ্গলবার এই পদযাত্রা রাজধানী ওয়েলিংটনে এসে পৌঁছে।